শহরে কি গ্রামে এখন হাতে হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট। আর্থিক লেনদেনের বিকাশ, রকেট, শিওর ক্যাশ ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে।
প্রযুক্তিঘেরা এ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী। কীভাবে রক্ষা করব নিজের ও সন্তানের সুস্থ জীবন? কোরআন ও হাদিসের আলোকে সন্তানের জীবন সাজিয়েই দিতে পারি। এক সময় মোবাইল ছিল প্রয়োজন। শুধু কথা বলতে ও গান শুনতে পারতাম। কয়েক বছর হল এসেছে স্মার্টফোন। টাচ মোবাইল।
ছবি তোলা, ইমোতে ভিডিও কল দেয়া থেকে শুরু করে সবই আছে মোবাইলে। কথা বলা ও বিনোদন একসঙ্গে চলছে। এখন আবার থ্রি-জি, ফোর-জি। সামনে ফাইভ-জি আসছে।
টিভিতে রয়েছে ১০০টি ওপর চ্যানেল। সন্তানকে বখাটে করছে বেশিরভাগ চ্যানেল। চ্যানেলে যে ধরনের নাচ-গান বা আইটেম সং হয় তা বাবা-মাকে নিয়েই দেখা যায় না, বাচ্চাকে নিয়ে উপভোগ করা তো দূরের কথা। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক অশ্লীল আচরণের কাছেও যেও না।’- ৬ সূরা আনআম : ২৫১
আমি টিভি না হয় বন্ধ করে দিলাম। ছেলেকে শাসন করলাম। কিন্তু মোবাইল বন্ধ করব কীভাবে? সে তো মোবাইলে ডাটা প্যাকেজে ১ জিবি, ১.৫ জিবি কিনে ঠিকই তার ঘরে বসে দেখছে।
ইউটিউব, গুগল- সব জায়গায় ক্লিক করে পর্নো থেকে সবকিছুই পলকে পাচ্ছে। তাকে বোঝাতে হবে। ছেলে বা মেয়েকে বলতে হবে যে, আল্লাহ সব জানেন। আমি বা তোমার মা না জানলেও তুমি আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারবে না। পবিত্র কালামে পাকে আছে, ‘তিনি জানেন চোখের চুরিকে যা অন্তরে লুকিয়ে থাকে।’-৪০ সূরা মুমিন : ১৯
ইউটিউব, গুগল তো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে একমাত্র সরকার। এটা সরকারের দায়িত্ব। সরকার সে দায়িত্ব পালন না করলে আল্লাহর কাছে এর জন্য জবাবদিহি করতেই হবে।
সামনে নির্বাচন, ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেপানো যাবে না, ইত্যাদি বলে আখেরে মাফ পাওয়া যাবে না। কর্মফল কাউকে ছাড়বে না। পবিত্র কালামে পাকে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী, একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না।- ৬ সূরা আনআম : ১৬৪
আরও জানুন ঃ ইসলামের বিধান অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখলে জরুরীভাবে যা করা উচিৎ
এসব প্রযুক্তি যারা সরবরাহ করে সেসব দেশেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চীনে রাত ১০টার পর ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত। যাতে করে ছাত্ররা সঠিক সময়ে ঘুমায়। রাত জেগে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ চালাতে না পারে। ‘চীনে গত ৩ মাসে ৪০০০ ওয়েবসাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অশ্লীলতা রুখতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের কারণেও অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ হয়েছে। এ বছর মে মাস থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। Online Activist দের বহু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।’
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানেও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে সব তথ্যপ্রযুক্তি।
আমরা তৃতীয় বিশ্বের একটি উঠতি দেশ। পত্রিকায় পড়েছি দেশে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে। শুধু টাকায় ধনী হলে চলবে না। নৈতিক দিক দিয়ে, আদর্শের ও চরিত্রের দিক দিয়েও ধনী হতে হবে।
শুধু অশ্লীলতাই নয়, ইমো, ফেসবুকের কারণে সামাজিক সম্পর্কও নষ্ট হচ্ছে। কারও বাসায় গেলে দেখা যায় অনেকে বা তাদের ছেলেমেয়ে অতিথির সঙ্গে আলাপ না করে ফেসবুকে বা ই-মেইলে মগ্ন হয়ে আছে। এটা অভদ্রতা। অসামাজিক আচরণ। অথচ ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক বা আত্মীয়তা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সবশেষে বলছি, পাগলা ঘোড়া সামলাতে মালিক লাগাম টেনে ধরেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এ গড্ডালিকা প্রবাহে জাতির লাগাম টেনে ধরবে কে? ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে প্রজন্মকে সতর্ক না করলে। প্রজন্মকে সাজিয়ে সঠিক পথে সামনে এগিয়ে দিতে হবে আমাদেরই।
দৈনিক যুগান্তর, ১৭ অক্টোবর ২০১৮