ডিম খাওয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের মত বদলাচ্ছে

0
22
White eggs on a concrete table. One egg is cracked and you can see the yellow yolk

চীনে প্রায় ৫ লাখ লোকের ওপর এক গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন একটা করে ডিম খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে। কসময় যে বলা হতো বেশি ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর, বিজ্ঞানীরা এখন সে মতবাদ পাল্টে ফেলেছেন।’

তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিম থেকে শারীরিক উপকার পেতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে।

‘পুষ্টি সংক্রান্ত নানা গবেষণায় অনেক সময়ই কিছু না কিছু ফাঁক থেকে যায়, কিন্তু চীনে বড় এই সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে চালানো গবেষণা থেকে অন্তত একটা বিষয় পরিস্কার যে প্রতিদিন একটা ডিম খেলে তার থেকে হৃদযন্ত্র বা শরীরের রক্ত সঞ্চালনে কোন ঝুঁকি তৈরি হয়না, বরং প্রতিদিন একটা ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে” – বলছেন ইংল্যাণ্ডে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিটা ফরুহি।

বহুদিন পর্যন্ত ডিমকে ”শরীরের শত্রু” বলে প্রচার করা হয়েছে। ডিম স্যালমোনেলা জীবাণুর উৎস, ডিম শরীরে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়- এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই এসেছে।

কাজেই এখন ডিম নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতবাদ পাল্টে যাচ্ছে কেন?

ক’টা ডিম শরীরের জন্য ভাল?

এখন বেশিরভাগ ডাক্তারই স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় ডিম রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বেশিরভাগ পুষ্টিকর উপাদান প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হল ডিম।

যেমন, ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি এবং বি-টুয়েলভ্। এছাড়াও ডিমে আছে লুটেইন ও যিয়াস্যানথিন নাম দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা বৃদ্ধ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে।

ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের ড: ফ্র্যাঙ্কি ফিলিপস্ বলছেন, ”দিনে একটা – এমনকি দুটো ডিমও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।”

”বেশি ডিম খাওয়ায় ভয়ের কোন কারণ নেই।”

ড: ফিলিপস্ বলছেন, এখানে সতর্কবাণী শুধু একটাই – ”একধরনের খাবার বেশি খেতে গিয়ে অন্য খাবারে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব পুষ্টি রয়েছে সেগুলো বাদ দেওয়া ভুল হবে।”

তিনি আরও বলছেন, ডিম যদিও ”প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ একটা উৎস”, কিন্তু একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমাদের অন্যান্য খাবার থেকেও আমরা প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাই – যা অনেক সময়ই শরীরের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি। কাজেই ”অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে”।

২০০৭ সালে ব্রিটিশ হার্ট ফাউণ্ডেশন নামে একটি সংস্থা বলছে, কোলেস্টেরল বিষয়ে নতুন যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তার আলোকে সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম না খাওয়ার যে পরামর্শ তারা ২০০৭ সালে দিয়েছিল তা তারা তুলে নিচ্ছেন।

কোলেস্টেরল কতটা?

ব্রিটেনের চিকিৎসকরা বলছেন “ডিমে যদিও কিছু কোলেস্টেরল আছে, কিন্তু আমরা অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বিজাতীয় যেসব পদার্থ এর সঙ্গে খাই (যেগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট নামে পরিচিত) সেগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের যতটা ক্ষতি করে, ডিমের কোলেস্টেরল সে ক্ষতি করে না।”

এককথায়, কোলেস্টেরলের সমস্যার কথা যদি ভাবেন, ডিম সেখানে কোন ক্ষতির কারণ নয়। যে ক্ষতিকর চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে ডিম রান্না করছেন সেটা সমস্যা কারণ হতে পারে। কাজেই কীভাবে ডিম রাঁধবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

পুষ্টিবিদরা ডিমের উপকারিতার দিকটা সবসময়েই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

গবেষণা অনুযায়ী, একটা প্রমাণ সাইজ ডিমে (৫৮ গ্রাম) ৪.৬ গ্রাম চর্বি থাকে- প্রায় এক চা-চামচ সমান। এর মাত্র এক চতুর্থাংশ হল স্যাচুরেটেড, যেটা শরীরে জমাট বাঁধতে পারে। এই স্যাচুরেটেড চর্বির অংশ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।

এর সঙ্গে যদি আপনি রান্নার সময় মাখন বা ওইধরনের চর্বিযুক্ত জিনিস ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই সেইভাবে রাঁধা ডিম আপনার কোন উপকারে আসবে না।

ডিমে স্যালমোনেলা কি?

আশির দশকে ব্রিটেনের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডিমের সঙ্গে স্যালেমোনেলা জীবাণুকে জড়িয়ে মন্তব্য করার পর ব্রিটেনে ডিম খাওয়া নিয়ে বিরাট ভীতি তৈরি হয়েছিল।

১৯৮৮-র ডিসেম্বরে মন্ত্রী এডউইনা কারি বলেছিলেন ”ব্রিটেনে যেসব ডিম বাজরে আসে তার বেশিরভাগেই স্যালমোনেলা জীবাণু রয়েছে।” অবশ্য তার ওই মনএতব্যর জেরে পরে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

তবে আশির দশকে ডিমে স্যালমোনেলা জীবাণুর সংক্রমণের একটা সমস্যা ছিল। পরে নব্বইয়ের দশকে ডিম খামারিরা টিকা কর্মসূচি চালু করার পর এই জীবাণুর সমস্যা এখন আর নেই বললেই চলে।

কীভাবে ডিম রান্না করা উচিত?

ডিম রান্নার ব্যাপারে সবচেয়ে সহজ, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হল ডিম সিদ্ধ করা বা পানিতে ডিম পোচ করা।

বেশিরভাগ পুষ্টিবিদ ডিম ভাজা করে না খাবার পরামর্শ দেন। কারণ ডিম যে তেলে বা মাখনজাতীয় চর্বিতে ভাজা হয়, তার মধ্যেকার স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কাঁচা ডিম বা হালকা করে রান্না ডিমও পুষ্টিযুক্ত, যদি সেই ডিম স্যালমোনেলা জাতীয় জীবাণুমুক্ত হয়- অর্থাৎ জীবাণু না থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা খামরিরা নিয়ে থাকেন।

জীবাণু সংক্রমণের ব্যাপারে উদ্বেগ থাকলে ডিম রান্না করে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

কীভাবে ডিম মজুত রাখা উচিত?

কখনও এমন ডিম কিনবেন না যা ভাঙা বা ফাটা- কারণে সামান্য ফাটা থাকলেও সেখানে ধুলোবালি বা জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

বিবিসির খাদ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল ডিম ফ্রিজে রাখুন – ডিম রাখার বিশেষ যে বাক্স ফ্রিজে থাকে সেখানে ডিম সবচেয়ে ভাল থাকে।

বাক্সের ভেতরে থাকলে ডিমের সাদা অংশ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভাল থাকে। কিন্তু ডিমের কুসুম ভাল থাকে তিনদিন। বরফে হিমায়িত অবস্থায় ডিমের সাদা ও কুসুম ভাল থাবে তিন মাস পর্যন্ত।

ডিম ভাল আছে কীনা তা অনেকে ঠাণ্ডা পানিতে ডিম ফেলে পরীক্ষার করার কৌশল জানেন।

একটা পাত্রে ঠাণ্ডা পানিতে গোটা ডিম রাখুন – যদি ডিম ডুবে পাত্রের তলায় চলে যায়, তাহলে বুঝবেন ডিম তাজা আছে। ডিম যদি ভেসে থাকে তাহলে বুঝতে হবে ডিমটা তাজা নেই।

তবে অনেক সময়ই ডিমের বাক্সের গায়ে লেখা থাকে কোন্ তারিখের মধ্যে ডিম ব্যবহার করে ফেলতে হবে – যা হয় সাধারণত ডিম পাড়ার পর ২৮ দিন পর্যন্ত।

হৃদযন্ত্র বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ড: ফিলিপস্‌-এর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল ডিমে কাঁচা লবণ ছিটিয়ে খাবেন না।

LEAVE A REPLY