তেল খাবেন নাকি খাবেন না? কী ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, তাই না?
তেল বা চর্বি হলো খাদ্যের ছয়টি উপাদানের একটি উপাদান। অতিরিক্ত তেল বা চর্বি আমাদের দেহের জন্য যেমন খারাপ তেমনি আমাদের দেহে তেলের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে অনেক।
অনেকেই আছেন যারা তেল বা চর্বির খারাপ দিকগুলো থেকে বাচঁতে খাবারে তেল একদমই খান না অর্থাৎ রান্নায় একদমই তেল ব্যবহার করেন না।
দেখা যায়, সবজি রান্না করে তেল ছাড়া। মাছ খাচ্ছে সিদ্ধ করে। এর একমাত্র কারণ হলো তেল যেন তার শরীরে কোন ক্ষতি করতে না পারে। এছাড়া আজকাল দেখতে পাচ্ছি, তেল ছাড়া রান্না করার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কিন্তু খাবারে একদম তেল ছাড়া রান্না কিন্তু আপনার ক্ষতিও করছে অনেক।
আপনার দেহ বঞ্চিত হচ্ছেন নানা পুষ্টি উপাদান থেকে। কথাটা আর একটু পরিষ্কার করে বলি। ভিটামিন কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমন এ,বি,সি,ডি ই,এবং কে। এ সমস্ত ভিটামিন এর মধ্যে ভিটামিন বি এবং সি হচ্ছে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন আর এ,ডি,ই এবং কে হচ্ছে তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। অর্থাৎ এই ভিটামিনগুলো আমাদের দেহে তখনই কাজ করবে যখন এর সঙ্গে তেল বা চর্বি যোগ করা হবে।
এখন আপনি যদি তেল ছাড়া রান্না করে খাবার খান তবে খাবারের মধ্যে যে ভিটামিন থাকে অর্থাৎ এ,ডি,ই,এবং কে আপনার দেহে কাজ করবে না বা কাজ করতে পারবে না। অথচ ভিটামিন এ,ডি,ই,এবং কে আমাদের দেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন।
আমাদের দেহে এসমস্ত ভিটামিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। তার মধ্যে একটি করে কাজ আমি উল্লেখ করছি। যেমন ভিটামিন এ যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি আমাদের দেহের হাড় গঠনে সাহায্য করে। ভিটামিন ই প্রজনন ক্ষমতা রক্ষায় সাহায্য করে। ভিটামিন কে আমাদের রক্ত জমাটে সাহায্য করে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এসব ভিটামিনের অভাবে আমাদের দেহে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই খাবারের এসব ভিটামিন শরীরের কাজে লাগাতে হলে খাবারের সঙ্গে তেল যোগ করতে হবে। সেটা রান্নায় হতে পারে বা ড্রেসিং হিসাবে হতে পারে।
এছাড়া তেলের আরেকটি কাজ হচ্ছে দেহে শক্তি উৎপাদন করা। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তেলের পরিমাণ যেনো অতিরিক্ত না হয়।
তেল কতটুকু খাবেন?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কতটুকু তেল আপনি খাবেন। সাধারনত এজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ২০-৩৫ মিলিলিটার তেল গ্রহণ করতে পারেন। এই তেল(অসম্পৃক্ত চর্বি )হতে পারে সয়াবিন তেল, সূর্যমুখীর বিচির তেল, রাইস ব্রান তেল,অলিভ ওয়েল ইত্যদি তবে সম্পৃক্ত চর্বি যেমন- ডালডা, ঘি, গরু-খাসির চর্বি ইত্যাদি গ্রহণ না করাই ভাল।
সবশেষে বলতে চাই, একদম তেল ছাড়া খাবার আপনাকে সুস্থ রাখার পরিবর্তে অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে তেল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
লেখক: মাহফুজা নাসরীন শম্পা,
পুষ্টিবিদ, আলরাজী ইসলামিয়া হাসপাতাল,
বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
দৈনিক যুগান্তর , ২৮ অক্টোবর ২০১৮