৮টি কারণে আমরা মূল্যবান দাঁতকে নষ্ট করছি

0
54
দাঁত ব্রাশ অনেকক্ষণ এবং অতি জোরে জোরেটার্ম মুছে ফেলুন: হট পিজ্জার সাথে ঠান্ডা পানীয় হট পিজ্জার সাথে ঠান্ডা পানীয়টার্ম মুছে ফেলুন: ভুল টুথপেস্ট ব্যবহার ভুল টুথপেস্ট ব্যবহারটার্ম মুছে ফেলুন: দাঁঁত দিয়ে বোতলের ছিপি খোলার অভ্যাস দাঁঁত দিয়ে বোতলের ছিপি খোলার অভ্যাসটার্ম মুছে ফেলুন: নিয়মিত দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং না করা নিয়মিত দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং না করাটার্ম মুছে ফেলুন: একবার দাঁঁত পরীক্ষা করা একবার দাঁঁত পরীক্ষা করা
৮টি কারণে আমরা মূল্যবান দাঁতকে নষ্ট করছি
প্রতিরোধের সহজ সস্তা নিয়মগুলো না মানার কারণে একটি দাঁতকে চিকিত্সা করে বাঁচাতে কয়েক হাজার টাকা খরচ করি। দাঁতের যত্নে  বিশেষ কয়েকটি ভুল সংশোধন করে সময়মত সঠিকভাবে যত্ন নেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরতে চাই। যেমন:-

১. দাঁত ব্রাশ অনেকক্ষণ এবং অতি জোরে জোরে-

আপনি যদি অনেকক্ষণ  ধরে  ব্রাশটি  দাঁঁতের উপর ঘষতে থাকেন তবে এই দাঁঁতের উপর শক্ত আবরণ এনামেল ক্ষয় হয়ে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে তখন আপনার দাঁঁত অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা গরম পানিতে শিরশির করবে, খেতে পারবেন না কোনো কিছু্। এর ফলে মাড়ি থেকে দাঁঁত সরে আসবে। সুতরাং বাজারের নরম ধরণের ব্রাশ দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উপর থেকে নিচে সকল দাঁঁতগুলো আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে।

২. প্রতিদিন বেশী পরিমাণে এ্যাসিডিক ফুড খাওয়া-

প্রতিদিন সোডা, কমলার রস, মদ, খেলাধুলার সময় ব্যবহূত পানীয়, ক্যান্ডি এবং কমলা ইত্যাদি খাবারে থাকে প্রচুর এ্যসিড। একটি বরফের টুকরা যেমন পানিতে ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে গলে অদৃশ্য হয়ে যায় তেমনি আমাদের দাঁঁঁতের সবচেয়ে শক্ত এনামেলও কিন্তু এই ধরণের এ্যাসিডিক ফুডের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যদি এইসব খাদ্যগুলো খাওয়ার সাথে সাথে পানি বা চিজ জাতীয় খাদ্য খাওয়া না হয় তবে মুখের ভিতর লালার পিএইচ লেভেল কমে গিয়ে দাঁঁতের ক্ষয় শুরু হবে। যদি কমলা বা আনারস জুস খাওয়ার সময় স্ট্রো ব্যবহার করা যায় তবে কিছুটা রক্ষা হয়। তবে সবচেয়ে ভাল হয় এই জাতীয় ফলের রস খাওয়ার পর ভালভাবে কুলিকুচি ও সেই সাথে দাঁঁত ব্রাশ করা যায়।

৩.দাঁঁতকে অতিরিক্ত সাদা করার চেষ্টা-

আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে দাঁঁতের রং পরিবর্তন হয়, তখন এগুলো আর সাদা থাকে না।  কিন্তু এই দাঁঁতগুলোকে সাদা করার জন্য যদি অতিরিক্ত ব্লিচিং করা হয় তবে দাঁঁতের এনামেল বা আবরণ এ্যাসিডের আক্রমণের শিকার হয় এবং এনামেলের আবরণ ফেটে একটু ফাঁকা হয়ে যায় ফলে দাঁঁত শিরশির করে।

৪. হট পিজ্জার সাথে ঠান্ডা পানীয়-

যখনই আমরা অতিরিক্ত গরম পিজ্জা বা সিঙ্গাড়া বা পিঁয়াজুতে কামড় দেই তখনই কিন্তু আমরা আমাদের দাঁঁতের শক্ত আবরণ এনামেল কে বাড়িয়ে ফেলি এবং সেই সাথে সাথে যখন আমরা ঠান্ডা পানীয়তে চুমুক দেই তখনই কিন্তু এনামেলে একটা চুলের চেয়ে সুক্ষ ক্রাক বা ফাটল সৃষ্টি হয়।  হঠাত্ গরম, হঠাত্ ঠান্ডা খাওয়ার ফলে এনামেল কিছুটা প্রসারিত হয় বা বেড়ে যায় এবং ফাটল ধরে। সুতরাং গরম খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই আবার ঠান্ডা খাবার খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।

৫. ভুল টুথপেস্ট ব্যবহার-

দাঁঁতের সুস্থতার জন্য সবসময় অতিরিক্ত কর্কশ বা রুক্ষ টুথপেষ্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেক ধরণের বিজ্ঞাপনেই বলা হয় টুথপেস্ট এর মধ্যে আছে এমন কিছু পদার্থ যা  আপনার দাঁঁত রাতারাতি ঝকঝকে সাদা করে দিতে সক্ষম। এই ধরণের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যারা এই পেস্ট ব্যবহার করবেন তাদের দাঁঁত অতি তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই  বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে টুথপেস্ট ব্যবহারে সবসময় ফ্লুরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো।

৬. দাঁঁত দিয়ে বোতলের ছিপি খোলার অভ্যাস-

অনেকেই দাঁঁতের শক্তি দেখানোর জন্য দাঁঁত দিয়ে কোল্ড ড্রিংকস এর বোতল খোলার চেষ্টা করেন, তেমনি দাঁঁত দিয়ে শক্ত কিছু ভেঙ্গে কৃতিত্ব নিতে চান। আসলে দাঁঁত আমাদের জন্য প্রয়োজন সৌন্দর্য্যে, শব্দ উচ্চারণে আর খাদ্যদ্রব্যকে পিষিয়ে পাকস্থলীতে পাঠানো। অন্য কিছু কাজে ব্যবহারের জন্য নয়। এই ধরণের বোতলের ছিপি খোলার কারণে অনেক সময় দাঁঁত ভেঙ্গে যায়, ফেটে যায় ও ফাটল ধরে। পরবর্তীতে তার চিকিত্সা জটিলতা ছাড়াও ব্যয়ও কিন্তু বেড়ে যায়। সেই সাথে কমে যায় দাঁঁতের আয়ু।

৭. নিয়মিত দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং না  করা-

প্রতিদিন অন্তত: দুইবেলা সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত:৩ থেকে ৪ মিনিট দাঁঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। সেই সাথে দাঁঁতের ফাঁক থেকে ময়লা বা খাদ্যকনা বের করে আনার জন্য ডেন্টাল ফ্লস (এক ধরণের সিল্ক সূতা ) ব্যবহার করা ভালো  যদি আপনার কর্মস্থলে দাঁঁত ব্রাশ না থাকে তবে বাসার মতো করে সেখানেও একসেট টুথব্রাশ, পেস্ট ও ফ্লস রাখুন। কারণ অনেক সময়ে অফিসেই নাস্তা বা মধ্যাহ্ন ভোজন বা রাতের আহার সারতে হয়।  তখন সেখানেও যাতে দাঁঁত ব্রাশ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখাটাও জরুরি। তবে ব্রাশের আগে অবশ্যই ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করবেন, পরে নয়। নিয়মিত দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লস না করলে সহজেই দাঁঁঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি হয় এবং ব্যথা ও প্রদাহ থেকে আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়। সুতরাং দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লস করা প্রয়োজন প্রতিদিন অন্তত ২ বার ।

৮. একবার দাঁঁত পরীক্ষা করা-

বিজ্ঞানসম্মতভাবে নিয়মিত বছরে  অন্তত: একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁঁতের স্কেলিং করানো যেমন জরুরী, তেমনি  দাঁঁতগুলো পরীক্ষা ও সেই সাথে মুখের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা করানোও জরুরী।  তাতে মুখ ও দাঁঁতের সামান্য গর্তকে ফিলিং করিয়ে যেমন রক্ষা করা যাবে তেমনি একটি  প্রি-ক্যান্সার ঘা বা প্রদাহকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। অতএব, Prevention is better than Cure. প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়, সস্তা ও নিরাপদ।
মুখ ও দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ জুলাই ২০১৮

LEAVE A REPLY