থ্যালাসেমিয়া ঝুঁকিমুক্ত হতে কী করবেন?

0
50
থ্যালাসেমিয়ার ধরনটার্ম মুছে ফেলুন: থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণসমূহ থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণসমূহটার্ম মুছে ফেলুন: আলফা থ্যালাসেমিয়া আলফা থ্যালাসেমিয়াটার্ম মুছে ফেলুন: বিটা থ্যালাসেমিয়া বিটা থ্যালাসেমিয়াটার্ম মুছে ফেলুন: থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়টার্ম মুছে ফেলুন: থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসাটার্ম মুছে ফেলুন: থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধটার্ম মুছে ফেলুন: গর্ভস্থ সন্তানের থ্যালাসেমিয়া জানার জন্য যে পরীক্ষাগুলো করতে হবে গর্ভস্থ সন্তানের থ্যালাসেমিয়া জানার জন্য যে পরীক্ষাগুলো করতে হবে
থ্যালাসেমিয়া ঝুঁকিমুক্ত হতে কী করবেন

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। রক্তের হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন ত্রুটির কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভোগে থাকেন। থ্যালাসেমিয়ার কারণে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

থ্যালাসেমিয়ার ধরন:

এটি প্রধানত দুই ধরনের। আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা থ্যালাসেমিয়া সাধারণত বিটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়াবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি।

বিটা থ্যালাসেমিয়ার তীব্রতা বেশি হলেও বিশ্বে বিটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। আলফা থ্যালাসেমিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সর্বত্র এবং কখনও কখনও ভূ-মধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণসমূহ

রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া, ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস, দেহে অতিরিক্ত আয়রন জমা হওয়া, সংক্রমণ, স্প্লিন বা প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, অবসাদগ্রস্ততা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, অস্বস্তি, মুখের হাড়ের বিকৃতি বা মঙ্গলয়েড ফেসিস অর্থাৎ মুখ দেখতে একটু অস্বাভাবিক হবে, শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া, পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া, প্রস্রাব গাঢ় রংয়ের হওয়া, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ইত্যাদি।

থ্যালাসেমিয়ার কারণ

ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। বাবা অথবা মা, অথবা বাবা-মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া জিন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাবা এবং মা উভয়ের থ্যালাসেমিয়া জিন থাকলে ভূমিষ্ঠ শিশুর শতকরা ২৫ ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।

১. আলফা থ্যালাসেমিয়া

এই রোগের জন্য ১৬নং ক্রোমোজোমে উপস্থিত আলফা-চেইন উৎপাদনকারী জিনের মিউটেশান বা ডিলিশান দায়ী। ৪টি জিন দিয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়া চেইন তৈরি হয়। বাবা-মা থেকে প্রাপ্ত চারটি জিনের মধ্যে এক বা তার অধিক ত্রুটিপূর্ণ হলে আলফা থ্যালাসেমিয়া হয়। যত বেশি জিন ত্রুটিপূর্ণ হবে তত বেশি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিবে। যেমন:

► ১টি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে থ্যালাসেমিয়ার কোনো লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যাবে না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তার সন্তানের মধ্যে এই রোগ ছড়াবে।

► ২টি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে হালকা উপসর্গ দেখা যাবে। এই অবস্থাকে বলে আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর অথবা আলফা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট।

► ৩টি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে এর উপসর্গগুলো মাঝারি থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই অবস্থাকে বলে হিমোগ্লোবিন এইচ ডিজিজ।

► ৪টি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে একে বলে আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর অথবা হাইড্রপস ফিটালিস।

২. বিটা থ্যালাসেমিয়া

বিটা থ্যালাসেমিয়া চেইন গঠিত হয় ২টি জিন দিয়ে। বাবা-মা থেকে প্রাপ্ত ৪টি জিনের মধ্যে এক বা তার অধিক জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়। এক্ষেত্রে:

► ১টি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে হালকা উপসর্গ দেখা যায়। এই অবস্থাকে বলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (Beta-thalassemia minor) অথবা বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট (Beta-thalassemia trait).

► ২টি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে মাঝারি থেকে মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায়। এ অবস্থাকে বলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর (Beta-thalassemia major) অথবা কুলিস অ্যানিমিয়া (Cooley’s anemia). নবজাতক যেসব শিশুর এই সমস্যা থাকে তারা জন্মের সময় বেশ স্বাস্থ্যবান থাকে। তবে জন্মের প্রথম দুই বছরের মধ্যেই এর উপসর্গ দেখা যায়।

বর্তমান বিশ্বের আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছে। থ্যালাসেমিয়া স্বল্প উন্নত দেশ যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে বেশি দেখা যায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী ৫০ বছরে থ্যালাসেমিয়া অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়

ওপরে উল্লিখিত রোগের লক্ষণ ও কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় করা হয়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC), হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস (Hemoglobin Electrophoresis), ডিএনএ (DNA) টেস্টিং। এছাড়া হাত ও মাথার এক্স-রে করা হয়।

থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা

থ্যালাসেমিয়া মাইনরে সাধারণত চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। থ্যালাসেমিয়া মেজরে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। বারবার রক্ত গ্রহণের একটি বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত আয়রন জমে যাওয়া। এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এ ধরনের জটিলতা প্রতিরোধে আয়রন চিলেটিং এজেন্ট দেয়া হয়, যা দেহের অতিরিক্ত আয়রন বের করে দেয়।

আয়রনসমৃদ্ধ খাবার ও ওষুধ পরিহার করতে হবে, সঙ্গে ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দেয়া হয়। এছাড়া বারবার রক্ত সঞ্চালনের ফলে রোগীর প্লীহা (SPLEEN) বড় হয়ে যায়, ফলে প্লীহা কেটে ফেলতে হয়।

থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (Bone Marrow Transplantation). কিন্তু এটি অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনই থ্যালাসেমিয়া বাহক বা একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক এবং একজন হিমোগ্লোবিন-ই এর বাহক হয়, তবে প্রতি গর্ভাবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ২৫ ভাগ, বাহক শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৫০ ভাগ, আর সুস্থ শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ২৫ ভাগ।

স্বামী-স্ত্রী দুজনের যে কোনো একজন যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন, তাহলে নবজাতকের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তবে নবজাতক থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে যা কোনো রোগ নয়।

তাই এ রোগের বাহকদের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিহত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন থ্যালাসেমিক শিশুর জন্ম হ্রাস করা যায়। সুতরাং, দেরি না করে আজই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামক পরীক্ষাটি করুন এবং আপনার শিশুকে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখুন।

এছাড়া ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ যেসব পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক অথবা যাদের এক বা একাধিক থ্যালাসেমিক শিশু আছে তারা গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালাসেমিক শিশু নির্ণয় এবং তা পরিহার (গর্ভপাত) করতে পারেন। গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটি করালে ভালো হয়।

গর্ভস্থ সন্তানের থ্যালাসেমিয়া জানার জন্য যে পরীক্ষাগুলো করতে হবে

কোরিওনিক ভিলিয়াস স্যাম্পলিং (Chorionic villus sampling), অ্যামনিওসেনটিসিস (Amniocentesis), ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং (Fetal blood sampling).

দৈনিক যুগান্তর , ১১ জুলাই ২০১৮

LEAVE A REPLY